কর্ণকুহরে আজানের ধ্বনি – বাজে সুমুধুর সুরে –
পূর্বগগনে নবারুণ জাগে রাতের আঁধার ফুঁড়ে –
বাতায়ন পাশে দেবদারু শাখে –
ভোরের পাখিরা কিচিমিচি ডাকে –
শাপলা-বিছানো শান্ত দীঘিতে আলোর মুক্তো ঝরে –
আবেগ জড়ানো স্বপ্নিল ভূমি – তোমায় আজো মনে পড়ে।
কাশবন জুড়ে রাখালিয়া সুর উদাসী পাগল পারা –
মেঠো পথে পথে ঝংকার তুলে বাউলের একতারা –
কৃষাণের কাঁখে লাঙ্গলের ফলা –
আলপথ ধরে আনমনে চলা –
শালপাতা-ঘেরা ছোট্ট কুঠিরে বধূরা আপনহারা –
ঝীর্ণ-নদীর বুক চিরে বহে ঝির-ঝির বারিধারা।
ক্লান্ত পথিক বট-ছায়া তলে সাজায় স্বপ্নমেলা –
ফসলের মাঠে ঢেউয়ের নাচন সমীরণ হোলিখেলা –
ধূলিমাখা দেহে কচিকাঁচা মন –
কোলাহলে ভরে আম্রকানন –
চপলা প্রাণের ছন্দে মুখর সকাল সন্ধ্যা বেলা –
দখিনা হাওয়ার প্লাবনে ভাসায় শুভ্র-মেঘের ভেলা।
রংধনু আঁকা সুনীল আকাশ শালবনে গেছে মিশে –
পড়ন্ত রবি জ্বলে নিস্তেজে মাধবীলতার পাশে –
সুপারি-বিথীর আনাচে কানাচে –
বনফুল যেন উল্লাসে নাচে –
সলাজ বধূর চপলতা দেখে ঝিঙেফুলেরা হাসে –
শ্যামলিমা মাখা গোঁধুলী-আবীর, এখনো স্মৃতিতে ভাসে।
কাল-বোশেখীর প্রলয় নাচনে জীবনের মৌসুমী –
যৌবন-উথলা উচ্ছাসে জাগে বর্ষার জলাভূমি –
শারদীয় চাঁদ রূপে লাবণ্যা-
নবান্ন আনে খুঁশির বন্যা –
হিমেল শীতের কাঁথা মুড়ি দিয়ে, প্রিয়ার অধর চুমি –
ফাগুনের লালে রাঙা টুক-টুক – আমার জন্মভূমি ।
————
দেওয়ান সৈয়দ আব্দুল মজিদ
নিউ অরলিন্স, লুইজিয়ানা, যুক্তরাষ্ট্র ।